Skip to main content

শৈশবের রঙিন স্মৃতি: এক টুকরো স্বর্গ

 



শিশুকাল—যেন মাটির সোঁদা গন্ধে ভরা এক স্বপ্নময় সময়। তখন ছিল না মোবাইল, না ছিল ভিডিও গেম বা টিকটকের মতো কিছু। ছিল মাটির তৈরি মানুষ, মাটিতে মেশা খেলা, আর নির্ভেজাল হাসি-খুশি। শৈশবের সেই দিনগুলো যেন একটা ছোট্ট আদিম যুগ, যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের পৃথিবী বানিয়ে নিতাম।


আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রান্নাবাড়া করতাম। কেউ একজন হতো গৃহস্থ, আর অন্যরা আত্মীয় সেজে আসত সেই “বাসায়”। বাসন হতো নারিকেলের মালা, আর সবজি হিসেবে গাছের লতাপাতা। ঘাস ছিল আমাদের প্রধান সবজি। আর রান্নার মসলা? সেটা ছিল ইটের গুঁড়া! ইটের গুঁড়োতে সবজির এমন লাল রং হতো যে, আজকের এমডিএইচ মসলাও তাকে হার মানাবে।


যখন একেবারে ছোট ছিলাম, তখন রান্নাটা হতো কাঁচা। একটু বড় হতে শিখে গেলাম আগুন জ্বালানো। মালার নিচে আগুন দিয়ে রান্না করতাম। যদিও রান্নার মূল দায়িত্ব ছিল মেয়েদের। আমাদের কাজ ছিল “সবজি” জোগাড় করা। আমরা ছেলেরা মুরতা পাতা দিয়ে টাকা বানাতাম, আর সেই টাকা দিয়ে “কেনাকাটা” করতাম। ছোটবেলার এই খেলাগুলো ছিল আমাদের জীবনের ছোট্ট উৎসব।


আমাদের সময় গ্রামের বাচ্চারা মাটির সঙ্গে মিশে থাকত। তারা দৌড়াত, খেলত, আর কোথাও পড়ে গেলে সহজেই উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে আবার খেলায় মেতে যেত। এখনকার মতো বিছানায় শুয়ে ভিডিও গেম খেলার সুযোগ ছিল না। আর আজকের বাচ্চারা? তারা ইনস্টাগ্রাম আর রিলসে ব্যস্ত। একটুখানি ধাক্কা লাগলেই যেন তাদের হাড্ডি ভেঙে যায়।


আমাদের সময়ের খেলার মধ্য দিয়েই আমরা শিখেছি কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। সেই মাঠের ধুলো-মাটি, সেই দৌড়ঝাঁপ আর নির্মল আনন্দ—সবকিছুই শরীর মজবুত করেছে, মনের গভীরে স্মৃতি গেঁথে দিয়েছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভাবি, আমরা কতটা সৌভাগ্যবান যে নব্বইয়ের দশকের সেই মধুর সময়টা পেয়েছি।


আসলে, ছোটবেলার সেই দিনগুলো শুধুই স্মৃতি নয়—সেগুলো জীবনের এক টুকরো স্বর্গ। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ যে এমন এক সময়ে জন্ম নিয়েছি, যখন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মাটির সোঁদা গন্ধে ভরা ছিল।


Comments