এই আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবী আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না। মানুষ দিন দিন আরও উন্নত হতে চায়, নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে, কিন্তু সেই প্রযুক্তি প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে। আজকের পৃথিবী দূষিত, করাপ্টেড, বঞ্চিত ও অসহায়। নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর—সবকিছু হারিয়েছে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য। গ্রামগুলো শহরের মতো ব্যস্ত আর কৃত্রিম হয়ে উঠেছে। এই প্রযুক্তির উন্নতির পিছনে প্রকৃতি এবং পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমি বরাবরই অতীতের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি—সেই সময় যখন পৃথিবী ছিল শান্ত, প্রকৃতি ছিল তার আপন রূপে। আমি পছন্দ করি না শহরের কোলাহল, গাড়ির শব্দ, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আওয়াজ, কিংবা ধোঁয়ায় ভরা বাতাস। শহরের অট্টালিকা, ড্রেন, প্লাস্টিকের আবর্জনা, এবং আধুনিক যান্ত্রিকতা আমার শ্বাস রুদ্ধ করে দেয়। আমার শান্তি এবং তৃপ্তি আমি খুঁজে পাই প্রকৃতির মাঝে—গ্রামের নদীর পাড়ে, বড় কোনো গাছের ছায়ায়, পাহাড় কিংবা সাগরের পাড়ে।
আমি এমন এক জীবন কল্পনা করি যেখানে প্রযুক্তি নেই। থাকবে শুধু প্রকৃতি, সরলতা, আর কয়েকজন আপনজন। আমি এমন একটি জায়গায় থাকতে চাই যেখানে থাকবে বড় বড় পাহাড়, ঘন বন, সাগরের নীল জলরাশি আর খোলা মাঠ। কোনো বড় অট্টালিকা নয়, বাঁশের তৈরি ছোট্ট ঘর হবে আমার বাসস্থান। কোনো যান্ত্রিক গাড়ি নয়, চলাচলের জন্য থাকবে ঘোড়া। আয়রনের পরিবর্তে পাথরের তৈরি সরঞ্জাম দিয়ে কৃষিকাজ করব। যা ফলাব, তাই খেয়ে জীবনযাপন করব।
এই জীবনে থাকবে না কোনো প্রতিযোগিতা, থাকবে না অর্থনৈতিক হিংসা। সবাই তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, থাকবে না জাত, বর্ণ বা ধর্ম নিয়ে কোনো বিভেদ। রাতে সবাই মিলে চাঁদ ও তারার নিচে আড্ডা দেবে, নদীর পাড়ে বসে আনন্দ করবে। গোসলের জন্য থাকবে ঝরনা, আর প্রার্থনার জন্য কোনো বড় গাছের ছায়া।
আমার একমাত্র আধুনিক চাহিদা একটি রেডিও, যেখানে শুনব কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, মোহাম্মদ রফি, অলকা ইয়াগনিক, উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, শ্রেয়া ঘোষাল এবং অরিজিৎ সিং-এর গান। আর থাকবে কিছু বই—যেমন জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা, যা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর করবে।
এই স্বপ্নের জীবন হয়তো অনেকের কাছে অসম্ভব মনে হবে, কিন্তু আমি এমন একটি জীবনের জন্যই বেঁচে থাকতে চাই। প্রযুক্তির কৃত্রিমতায় নয়, প্রকৃতির কোলে, সরলতায় ঘেরা একটি শান্তির পৃথিবীতে।
Comments