ছোটবেলায় যখন প্রশান্ত স্যারের বাড়িতে টিউশন করতে যেতাম, দেখতাম স্যার ব্যস্ততার মাঝেও কী সুন্দরভাবে সময় বের করে উনার ঘরের পাশে বাগানে নানা ধরনের সবজি লাগাতেন। স্যারের সেই সবজির বাগান দেখে মনে হতো, প্রকৃতির সান্নিধ্যে এ যেন এক অন্যরকম শান্তি। স্যারকে সবুজের মাঝে কাজ করতে দেখে, আমার মনেও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হলো। সেই সময় থেকেই প্রকৃতির প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করতাম। তবে পড়াশোনার চাপে তখন নিজের জন্য সময় বের করা সম্ভব ছিল না।
এরপর যখন মামাবাড়ি যেতাম, দেখতাম নানি কী যত্ন করে ঘরের পাশের একটুকরো জমিতে ছোট্ট সবজি বাগান বানিয়েছেন। আমরা নানিকে সাহায্য করতাম, মাটি কোপানো থেকে শুরু করে বীজ বোনা পর্যন্ত সব কিছুতে। সেই সময় নানির সঙ্গ পেতে আর মাটির গন্ধে মাখামাখি হতে কী যে ভালো লাগতো, বলে বোঝাতে পারবো না। সেই ছোট্ট ছোট্ট কাজগুলোর মধ্যেই যেন এক অদ্ভুত আনন্দ খুঁজে পেতাম। তখন থেকেই মনে স্বপ্ন জাগলো—একদিন আমিও আমার নিজের ছোট্ট জমিতে সবজি চাষ করব।
২০১৯ সালে ডিগ্রি কমপ্লিট করার পর হাতে অনেকটা সময় পেলাম। সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ এল। জমি কিনলাম, আর শুরু করলাম আমার নিজের বাগান। এখন বাগানের মাটির সঙ্গে সময় কাটানো, বীজ বোনা, গাছে পানি দেওয়া—এসব করতে আমার মন যেন প্রশান্তিতে ভরে যায়। এই কাজের মধ্যে এমন এক প্রশান্তি আছে যা অন্য কিছুতেই পাই না।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাজ করার এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রতিদিন সকালে যখন দেখি ছোট্ট চারাগুলো বড় হয়ে উঠছে, পাতাগুলো রোদের আলোয় ঝলমল করছে, তখন মনে হয় জীবনের আসল সুখ এখানেই। এই কাজ আমার কাছে শুধু শখ নয়, এটা আমার আত্মার শান্তি, জীবনের নিখাদ আনন্দ। 💖
Comments