ভাইরে ভাই, দুঃখের কথা কোথা থেকে শুরু করি? নিজের গ্রাম, নিজের রাজ্যের সবুজ শ্যামল পরিবেশ ছেড়ে অন্য রাজ্যে পা রাখলে যেন মন আর ভালো থাকে না। মনে হয়, জীবনের সব রঙ ফিকে হয়ে গেছে। গুজরাটে এসে তো একেবারে হতবাক। চারপাশে কেবল ইট-পাথরের নগর, না আছে সবুজ, না আছে খোলামেলা পরিবেশ। প্রকৃতির শীতল ছোঁয়া যেন এখানে পৌঁছায়ই না।
আর খাবারের কথা যদি বলি, সেখানে তো যেন নতুন করে এক দুঃখের শুরু। প্রতিটা খাবারে মিষ্টি—চাখতে গেলেই মনটা কেমন জানি কেঁপে ওঠে। আমি তো মিষ্টি একেবারেই পছন্দ করি না, শুধু চায়ে সামান্য মিষ্টি ছাড়া। ক্ষুধার জ্বালায় রাগ করে মরিচ কিনেছিলাম, কিন্তু সেই মরিচটাও যে মিষ্টি হবে, এটা তো ভাবতেই পারিনি। মনে হচ্ছিল, গুজরাটের প্রতিটা মানুষ একটু মোটা কেন, তার কারণ বুঝতে আর বাকি নেই—তারা তো সারাদিন মিষ্টি খায়!
আমাদের বাঙালিদের জিহ্বা স্পাইসি খাবার ছাড়া তৃপ্তি পায় না। কিন্তু আমার এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, দিল্লি, মুম্বাই, পশ্চিমবঙ্গ আর আসাম ছাড়া আর কোথাও আমাদের রুচির খাবার নেই। রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট বা তামিলনাড়ু—সব জায়গাতেই খাবারে মিষ্টি যোগ করা বাধ্যতামূলক যেন।
আর ইট-পাথরের শহরগুলোতে প্রাণটা যেন হাঁপিয়ে ওঠে। এত গরম, এত কৃত্রিমতা—মনে হয়, এখানে জীবন থেমে গেছে। আমার মন তো চায় গ্রামে থাকতে, যেখানে চারপাশে নদী, পাহাড় আর সবুজের ঢল। হাঁস-মুরগির ডাক, পাখির গান, গরু-ছাগল, আর পোষা প্রাণীদের সঙ্গ—এইসব ছাড়া জীবনটা কেমন যেন শূন্য মনে হয়।
আমার মনের শান্তি গ্রামের সেই মাটির ঘ্রাণে, নদীর বয়ে চলা জলে, গাছের পাতার নাচনে আর প্রকৃতির স্পর্শে। শহরের এই কোলাহলে, এই মিষ্টির সাগরে আমি যেন নিজের শিকড় হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহ জানেন, কবে আবার সেই শান্তির ছোঁয়া পাব।
Comments